প্রকাশিত: Fri, May 19, 2023 4:49 AM আপডেট: Sun, May 11, 2025 8:49 PM
সাহসী নায়ক, দুর্ভাগা ঋণী!
হাসান শান্তনু : হাসানুল হক ইনু তখন তথ্যমন্ত্রী। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের একটি প্রতিনিধি দল কিছু দাবি নিয়ে যায় তাঁর কাছে। ওই দলে সদ্য প্রয়াত অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুকও ছিলেন। দাবি পূরণের আশ্বাস দেন মন্ত্রী, কিন্তু কথা রাখেননি। বিষয়টি পরে একাত্তর টিভির টকশোতে আলোচনায় আসে। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ফারুক ঘটনার কথা জানিয়ে ইনুকে রাখঢাকহীনভাবে ‘মিথ্যাবাদী’ বলেন। এ দেশের শিল্পী সমাজ দাবি-দাওয়া নিয়ে কতো মন্ত্রীর কাছে গেছে, এর ঠিক সংখ্যা বের করা দায়িত্বপূর্ণ অনুসন্ধান ছাড়া সম্ভব নয়। দাবি পূরণ না হওয়ায় মন্ত্রীকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলার সৎসাহস ফারুক ছাড়া অন্য কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রীর দেখানোর নজির নেই। আমৃত্যুই সাহসী ছিলেন তিনি। পয়সাকড়ির জন্য আপসটাপস করলে মৃত্যুর পর এতো বড়ো ঋণের বোঝার গুজবটা তাঁর বিরুদ্ধে ছড়াতো না। যে ঋণটা ছিলো, সেটা ২০০৯ সালেই ‘মিটমাট’ হয়ে যেতো।
মৃৃত্যুর পর ফারুকের মতো ঢাকার সিনেমার আর কোনো অভিনেতার বিরুদ্ধে এতো ‘ঋণের’ অপবাদ ছড়ায়নি। অভিনেতা রাজ্জাক, যাঁর বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে কর (ট্যাক্স) ফাঁকি দেয়ার গুরুতরো অভিযোগ ছিলো, যাঁর কাছে রাজস্ব বোর্ড কর চাইলে ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়তেন, করের ‘ঝামেলামুক্ত’ থাকতে যিনি জীবনের শেষ দিনগুলোতে কাজী হায়াতের মতো জাতীয়তাবাদী ঘরানার নির্মাতার সঙ্গে ভোল পাল্টে রাতারাতি আওয়ামী লীগের ‘সরকারপন্থি’ বনে যান, তাঁর মৃত্যুর পর এসব বিষয়ে একটাও কথা উঠেনি। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী, মোল্লা ক্ষ্যাপানো কথাবার্তা বলার বিষয়ে ‘অতি সচেতন’ ছিলেন নায়ক রাজ্জাক। দুর্ভাগ্য সঙ্গে বয়ে বেড়ানো ফারুক আদর্শিক অবস্থানের কথা যে কোনো সময় বলতেন পরম সাহসের সঙ্গে (যা অনেকের কাছে ‘বোকামি’)। তাঁর বিরুদ্ধে নিন্দা, সমালোচনা, অপবাদ ছড়ানোর বড়ো দাগে কারণ তিনটি।
এক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুকের প্রগতিশীল ও ‘ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করিনি’ বলে মুক্তিযুদ্ধের সাম্প্রদায়িকীকরণের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান। দুই, ‘ক্লিন শেভড’ মৌলবাদী, ‘বেবি ফেসড’ দুর্নীতিগ্রস্ত আন্দালিব রহমান পার্থের নির্বাচন করা সংসদীয় আসন থেকে ফারুকের সংসদ সদস্য হওয়া। ফারুক আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য হলেও বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক সঙ্গী পার্থের সঙ্গে পেরে উঠেননি। অদৃশ্য কিছু শক্তি বরাবরই ফারুকের বদলে পার্থকে সমর্থন করে। পার্থ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের পারিবারিক আত্মীয়। মঞ্জুর ছাওয়াল পার্থই প্রথম ফারুকের বিরুদ্ধে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণের কথিত তথ্য সামনে আনেন। তিন, দুর্ভাগ্য।
গার্মেন্টস ব্যবসায় জড়িয়ে ঋণগ্রস্ত, একটি চক্রের ‘প্রতারণার’ শিকার, এমন অভিযোগে ফারুক নিজেই সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মহাজোটের সরকারের আমলে। তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ নেন ২০০৯ সালে। কৈশোর কাল থেকে শেষ নিঃশ্বাসের ক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাসী ফারুকের দল ক্ষমতায় টানা প্রায় দেড় দশক ধরে। এ দলের টিকিটে তিনি সংসদ সদস্য হয়েছেন। কোনো প্রভাব খাটিয়ে ঋণের টাকা লোপাটের কথা ভাবেননি। ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখেছেন তাঁর গাজীপুরের স্বপ্নের কারখানা। তাঁর ঋণের পরিমাণ প্রায় পনেরো বছরের সুদ মিলিয়ে ১০১ কোটি টাকা। সেটা কিছুতেই সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা নয়।
দেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় ব্যাংকের এ ঋণ ‘সামাল’ দেয়ার ক্ষমতা কোনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরও থাকে। সংসদ সদস্য হয়েও ‘বোকা’ হওয়ায় ফারুক তা করতে পারেননি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দৃঢ়চেতা ফারুককে কিছুটা ‘পদবি কাতুরে’ হতে দেখা যায় একবার। ‘গান-বাজনা হারাম বলে ইসলামে উল্লেখ নেই’, এ বক্তব্যের জন্য শরিয়ত সরকার বয়াতিকে ‘অপরাধী’ হিসেবে ‘চিহ্নিত’ করা হয় সংসদে। সংসদ সদস্য হয়েও ফারুক তখন এর প্রতিবাদ করেননি। তাঁর অভিনীত সত্তরের দশকের ‘নয়ন মনি’ সিনেমার একটা গান একই কথার। ‘কোন কিতাবে লেখা আছে গো, হারাম বাজনা গান/ দাউদ নবির বাঁশির সুরে...’। হয়তো সংবিধানের সত্তর নম্বর অনুচ্ছেদের কারণেই সংসদে সেদিন ফারুক চুপ ছিলেন। যে দেশের মাটি ছ্ুঁয়ে দিলে শহিদ ও বীরযোদ্ধাদের পবিত্র রক্তে ভিজে যায় হাতের সব আঙুল, সে দেশে ফারুকরাই নমস্য। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। ওপারের জীবনে পূর্ণদৈর্ঘ্য ঘুমে থাকুন কালের বরেণ্য অভিনেতা। বিনম্র শ্রদ্ধা। লেখক: সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
